728x90 AdSpace

Latest News
Sunday 17 May 2015

মাইয়া মানুষ দেখাইতে চাইলে, পুরুষ না তাকায়া কেমনে থাকে?

ঘেরাটোপ ফেলে দিয়ে উর্বশী তার মনিমুক্তাস্বর্ণময় দৃষ্টিবিভ্রমকর উজ্জ্বল বেশ প্রকাশ করলেন। তারপর কিছুক্ষণ নৃত্য করে তার উত্তরীয় বা ওড়না খুলে ফেলে দিলেন। পর্বত ঋষি হাত তুলে বললেন, উর্বশী নিবৃত্ত হও, তোমার নৃত্যে শালীনতার অত্যন্ত অভাব দেখছি, এই চিত্তপীড়াকর নৃত্য আমরা দেখতে চাইনা।

মহামনি কুতুক ধমক দিয়ে বললেন, তোমার চিত্তপীড়া হয়েছে তো আমাদের কি?

ক্রমে ক্রমে উর্বশী তার দেহের ঊর্ধ্বাংশ অনাবৃত করলেন। তখন কর্দম ঋষি চোখ ডেকে বললেন, উর্বশী তোমার এই জুগুপ্সিত নৃত্য দেখলে আমাদের তপস্যা নষ্ট হবে, ক্ষান্ত হও। কুতুক ভৎর্সনা করে বললেন, কেন ক্ষান্ত দেবে? তোমার সহ্য না হয় তো উঠে যাও এখান থেকে।

তারপর উর্বশী ক্রমে তার সম্রস্ত আবরণ আর আভরণ খুলে ভূমিতে নিক্ষেপ করলেন এবং অবশেষে কুন্দশুভ্র নগ্নকান্তি প্রকাশ করে পাষাণবিগ্রবৎ নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।

কুতুক বললেন, থাকলে কেনুর্বশী আরও নির্মোক ত্যাগ করো। নারদ বললেন, আরও নির্মোক কোথায়, উর্বশী তো সম্রস্তই মোচন করেছে।

কুতুক বললেন, ওই যে সর্ব গায়ে একটি পদ্মপলাশতুল্য শুভ্রারক্ত মসৃণ আবরণ রয়েছে;
-আরে ও তো ওর গায়ের আবরণ।
-ওটাও খুলে ফেলুক,
-পাগল হলেন নাকি কুতুক? গায়ের চামড়া তো শরীরেরই অংশও তো পরিচ্ছেদ নয়
-পরিচ্ছেদ হোক, বা নির্মোক তো বটে। ওই খোলসটাও খুলে ফেলুক, নীচে কি আছে দেখবো।
নারদ বললেন, কী আছে শোনো, চর্মের নীচে আছে মেদ, তার নীচে মাংস, তার নীচে কংকাল
-তার নীচে কি আছে?
-কিচ্ছু নেই।
-যার প্রভাবে অকস্মাৎ পুরুষের বক্ষমাঝে চিত্ত আত্মহারা, নাচে রক্তধারা, উর্বশীর সেই নারীত্ব কোথায় আছে?

পরশুরামের নির্মোক নৃত্যের/আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প থেকে চলে যাই বাংলা সিনেমা দেহরক্ষীতে। উর্বশীর কাছ থেকে নায়িকা ববীর অর্থাৎ রাতের রানী সোহানার কাছে।

জাদু এ দুটি চোখে/ প্রেমের দোলা এ বুকে,/ জাদু আমারই রূপে/ নেশায় ডুবিয়ে রাখে/ এ রাত এখনও বাকি/ আমি সে রাতেরই পাখি/ খুঁজে নাও না আমায়/ ভালবাসো আজ এ রাতে/ দিওয়ানা কত দিওয়ানা/ ঘুরে আগে পিছে হয়ে ম্রাস্তানা/ ছোঁও না আমায়, ছোঁও না/ রাতের রানী আমি সোহানা।

এই হলো দেহরক্ষী সিনেমার প্রধান আকর্ষণ এবং জনপ্রিয়! আইটেম সঙ। যে গানের সাথে ঠোঁট মিলিয়েছেন নায়িকা ববি। এবং দেহরক্ষী সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় ডায়লগ যা আমি আমার লেখার হেডিং হিসেবে ব্যবহার করেছি- মাইয়া মানুষ দেখাইতে চাইলে, পুরুষ না তাকায়া থাকতে পারে?

ষাট থেকে সত্তরের দশকে নারীবাদীদের অভিধানে যুক্ত হয় ‘সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন’ বা ‘যৌনব্রস্তু’ শব্দটি। মার্কিন লেখক ক্যাথেরিন ম্যাককিননের লেখা ‘টুয়ার্ড আ ফেমিনিস্ট থিওরি অব দ্য স্টেট’ বইতে এই শব্দটির সংজ্ঞা দিয়েছেন এইভাবে- সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন হলো কথা, চাহনি, ভাব, ক্ষমতার প্রয়োগ, মিথ, ব্রাস্তবতা- যেকোনো কিছুর মাধ্যমে একজন নারীকে ব্রস্তু হিসেবে তুলে ধরা। ব্রস্তুটা কিন্তু অবশ্যই সেক্সুয়াল ব্রস্তু! অর্থাৎ মানুষ হিসেবে নারীকে তার ব্যক্তিত্ব ও অনুভূতির বাইরে এনে কেবলমাত্র ‘সেক্স অবজেক্ট’ হিসেবে অন্যের সামনে তুলে ধরা হবে এবং সেভাবেই তাকে মূল্যায়ন করা হবে!

এই লেখায় যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটা দেশের একটি নামকরা বুটিক হাউজের বৈশাখী কালেকশানের বিজ্ঞাপনের ছবি। এই সিরিজের আরো কয়েকটি ছবি আছে। ছবিতে শাড়ি পরা মেয়েকে এতোটাই সহজলভ্য হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে যে ১০-১২ বছরের পথশিশু, বছর চল্লিশের দোকান কর্মচারি, এমনকি ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধের সামনেও সে দেখার মত ব্রস্তুতে পরিণত হয়েছে!

নারীকে সেক্স্যুয়ালি অবজেক্টিফায়েড করে তুলে ধরছে কারা? দেশের নাম প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া, টেলিভিশন মিডিয়া, চলচ্চিত্র, বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, ফটোগ্রাফার, এমনকি আমি-আপনি-আমরাও!

নারীকে যৌন সামগ্রী রুপে তুলে ধরার ‘চেইন অব সাইকেলটা’ বেশ ভয়াবহ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে, ১৫ বছর আগেও একসময় ছেলেমেয়েরা কখনোই সেক্স অবজেক্ট হিসেবে প্রকাশিত কোন মেয়েকে নিয়ে নিজেদের মাঝে কথা বলতো না। অথচ এখন সেক্স অবজেক্ট বলে পরিচিতি পাওয়া শিলা, চামেলি, মুন্নি, সানি লিওন, সোহানাকে নিয়ে হরহামেশা কথা হয় এবং সেটা পাবলিকলিই হয়। অনেকে গর্ব করে বলেও থাকে সানি লিওনের স্বপ্নে সে বিভোর। ববিকে দেখে মাথা নষ্ট প্রভৃতি। ছেলেদের কথার মাঝে হয়তো মেয়েরাও ‘দুষ্টুমি’ করে আসে।

সব মিলিয়ে সেক্স অবজেক্ট হিসেবে মেয়েদের তুলে ধরাটাকে অপরাধ বা নেতিবাচক বলে মনে তো করা হয়ই না, বরং সেটা ইতিবাচকভাবেই ধীরে ধীরে আমাদের সমাজে পাকাপোক্ত আসন গেড়ে নিচ্ছে।

আমরা জানিই না যে, সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন একটা অসুস্থতার লক্ষণ; শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক অসুস্থতা। মেয়েরা ‘সেক্স অবজেক্ট’ হিসেবে অধিক পরিচিতি পাচ্ছে, সাথে সাথে বাড়ছে যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতা। নারীকে স্বতন্ত্র মানুষ ভাবতে না পারার কারণেই বারবার ধর্ষণের ক্ষেত্রে মেয়েটির পোশাকের প্রসঙ্গ উঠে আসে, তার নারীত্ব নয়। ব্রস্তুর ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নারীকেই নির্মাণ করতে তার ‘নারীর ইমেজ’। পুরুষ যদি সঙ্গী হয় হোক, নাহলে পড়ে থাক আ্রস্তাকুঁড়ে। ওইমেনচাপ্টার
  • Blogger Comments
  • Facebook Comments

0 comments:

Post a Comment

Item Reviewed: মাইয়া মানুষ দেখাইতে চাইলে, পুরুষ না তাকায়া কেমনে থাকে? Rating: 5 Reviewed By: Habib